অশরীরির নীশির ডাক।। The Ghost Call
অশরীরির নীশির ডাক
"মাঝরাতে
মানুষের নাম ধরে ডাক
দেয়,আর সেই ডাকে
সাড়া দিলেই মৃত্যু নিশ্চিত।" কথাগুলো এক নিশ্বাসে বললেন
করিম চাচা। VIDEO
আমি বললাম,
-তা চাচা আপনি একজন
স্কুলের শিক্ষক হয়ে এসবে বিশ্বাস
করেন?
-বাবা তুমি শহরের ছেলে।এসব
তুমি বিশ্বাস করবা না।গ্রামে থাকলে
তুমিও বুঝতা বাবা।যে পরিস্থিতির শিকার হয় সেই বুঝে।
-চাচা আমি আপনার সাথে
তর্কে যেতে চাচ্ছিনা।
-আচ্ছা ঠিক আছে।তা বাবা
গ্রামে আসলা কয়দিন হল?
-আচ্ছা বাবা তুমি একটু
সাবধানে থেকো।আজ আসি তাহলে।
এই বলে করিম চাচা
চলে গেলেন।গ্রামের মানুষ এখনও এতো টা
পিছিয়ে আছে তা গ্রামে
না আসলে বুঝা অসম্ভব।গত
কয়েকদিন ধরেই মা এর
মুখে শুনছিলাম এই ব্যাপারে।আমাদের গ্রামে
নাকি কোনো প্রেত-আত্মার
নজর লেগেছে।গ্রামের মানুষদের কাছে যা শুনলাম
তা হল,,মাঝরাতে মানুষের
বাসার দরজার বাইরে এসে সেই ব্যাক্তির
নাম ধরে ডাক দেয়
কেউ একজন।আর বাসায় থাকা ব্যাক্তিটি যদি
একবার সেই ডাকে সাড়া
দেয় তাহলে নাকি পরদিন তার
মৃত লাশ পাওয়া যায়
বাড়ির ভিতর থেকে।
বিষয়টি গ্রামবাসীদের জন্য অনেক ভয়ংকর
হলেও আমার কাছেও অতি
হাস্যকর লাগছে।একজন মানুষের নাম ধরে ডাক
দিলে সে মারা যাবে??
যাই হোক চায়ের কাপ
টা সিদ্দিক মিয়াঁর দোকানে রেখে বাড়ি ফেরার
চিন্তা করলাম।সিদ্দিক মিয়াঁর চা দোকান টা
গ্রামের আড্ডাখানা হিসেবে পরিচিত।গ্রাম টার ও অনেক
পরিবর্তন হয়েছে।আশেপাশের মানুষ জনের মুখে ভয়ের
স্পষ্ট ছাপ দেখতে পাচ্ছি।আসলেও
গ্রামের মানুষ অনেক সহজ-সরল
হয়ে থাকে।তাদেরকে বোকা বানানো অনেক
সহজ।এই মৃত্যু গুলোর ক্ষেত্রেও এরকম টাই হচ্ছে।কেও
তাদের হয়ত খুন করছে।এসব
ভাবতে ভাবতে এগুচ্ছি।তখন আমার হঠাত চোখ
পড়ল রমিজ চাচার উপর।বিষন্ন
মনে বসে আছেন দুরের
আমগাছটির নিচে।আমি এগিয়ে গেলাম।জিজ্ঞেস করলাম,,
-চাচা কেমন আছেন??
-আছি,আল্লায় রাখসে।তা বাবা তোমারে ঠিক
চেনলাম না।
-চাচা আমি আপনাদের গ্রামের
হান্নান মিয়াঁর বড় ছেলে তন্ময়।শহর
থেকে কালকেই আসলাম।
-ওহ হ্যাঁ।চিনসি এহন।
-তা চাচা আপনার মন
খারাপ কেন??
চাচী আর সোলেমান কই?
-সোলেমান আর নাই রে
বাজান!!! সোলেমান আর নাই। ওই
নিশিডাক আমার পোলাডারে কাইড়া
নিলো আমার কাছ থেইকা।
-কি বলছেন এসব??চাচা শান্ত
হন।কান্নাকাটি করে কি লাভ??কিভাবে হল এসব চাচা
আমাকে একটু খুলে বলবেন
কি?
-কি লাভ বাজান??তুমি
শহরে ফিরা যাও।গ্রামে খারাপ
আত্মার ছায়া পড়সে।এক এক
কইরা সবাই মারা পড়ব।তুমি
চইলা যাও।
এটা বলেই রমিজ চাচা
উঠে যেতে চাইলেন।আমি পিছন
থেকে বললাম,,
-চাচা আমি সবকিছুই জানি।এখন
আপনার সাহায্য প্রয়োজন আমার।এসব মৃত্যুর পিছনে নিশ্চয় কোনো রহস্য আছে।আপনি
সাহায্য না করলে আমরা
কখনই এ রহস্য উদঘাটন
করতে পারব না।তাই আমাকে
সেদিনের ব্যাপারে সব কিছু বলুন
প্লিজ।
রমিজ চাচা ঘুরে দাড়ালেন।ভালো
করে দেখলাম চাচার চোখের কোনে স্পষ্ট পানির
অস্তিত্ব রয়েছে।চাচা আমার পাশে এসে
বসলেন।ক্ষীণ স্বরে বললেন,,
-আমি তোমারে কিভাবে সাহায্য করব রে বাপ?এটা কোনো মানুষের
কাজ না।আমি নিজের চোখে সেই প্রতাত্মার
ছায়া দেখসি।আমাগো গ্রামের পাপের ফল এইগুলা।তাও যখন
শুনতে চাইতাসো,তখন শুনো।
রমিজ চাচা বলা শুরু
করলেন।
"সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত।অন্যান্য
মৃত্যু গুলাও অমাবস্যার রাতে হইসিল।কিন্তু আমার
পোলা টিটু এসব একদম
বিশ্বাস করত না।ও অনেক
একগুঁয়ে প্রকৃতির ছিল।যাই হোক সেদিন তোমার
চাঁচি গেসিল তার বাপের বাড়ি।শশুড়
আব্বা অসুস্থ ছিল।তাই আমাগো বাসায় টিটু আর আমি
একটা ঘরেই ঘুমাইসিলাম রাতে।হঠাত
মাঝরাতের দিকে কিসের একটা
শব্দে ঘুম ভাইংগা গেলো
আমার।চাইয়া দেখলাম কেডা যেনো টিটু
রে ডাকতাসে।আমি উইঠা বিছানায় বসার
পরে দেখি টিটুর ও
ঘুম ভাংসে।আওয়াজ টা এই নিয়া
২ বার ডাক দিসে।তারপর
আরেকবার ডাক দিল,,"টিটু,,,,"
আমার সোনা মানিক টা
সাড়া দিয়া দিল,,টিটু
কইল,,
"কেডা রে এতো রাতে
এহানে?"
ব্যাস সাথে সাথে আমার
পোলাডা কেমন যেনো চুপ
হইয়া গেলো।মাটিতে পইড়া গেল ধপাস
কইরা।আমার চোখের সামনে এক মুহুর্তের মধ্যে
কেমনে হইল এসব বুঝলাম
না।পোলাডার গায়ে হাত দিয়া
দেখলাম আমার পোলাডা আর
নাই রে বাজান।তার প্রান
পাখি উড়াল দিসে।আমি সাথে
সাথে বাইরে দৌড় দিলাম কে
আসে দেখার জন্য।কিন্তু দেখলাম একটা ছায়া আস্তে
কইরা উধাও হইয়া গেলো।চারিদিকে
ঘুইরাও কাওরে পাইলাম না রে বাজান।আমার
পোলাডারে মাইরা ফেলল ওই আত্মা
টা।আমার টিটু...."
চাচা কাঁদতে থাকলেন।তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই আমার
কাছে।তবুও চাচা কে ধরে
বাসায় পৌছে দিয়ে এলাম।
নিজের বাসার দিকে রওনা হলাম।হাটছি
আর ভাবছি আসলেও কি এমন কিছুর
অস্তিত্ব আছে এই পৃথিবী
তে নাকি এসব কিছুই
কোনো নিকৃষ্ট মানুষের কারসাজি?
বাসায় আসার পর এসব
ভাবনা থেকে দূরে চলে
এলাম।ব্যাস্ত হয়ে পরলাম পরিবার
পরিজন দের নিয়ে।আমি বাসায়
আসায় মা এর পর
সব থেকে বেশি খুশি
হয়েছে আমার ছোটভাই রাতুল।তাদের
সাথে ভাল সময় কাটাবার
ফাকে নিশিডাকের কথা ভুলে গেলাম
একদম।আমাদের গ্রামের বাড়িতে যেই ঘরটিতে রাতুল
থাকত,আমি আসার পর
রাতুল কে আমার সাথে
ঘর টি শেয়ার করতে
হচ্ছে কয়েকদিন ধরে।ঘরটিতে ২ টি বিছানা
পেতেই তার একটিতে ঘুমাতে
হয় আমাকে।তাতে অবশ্য রাতুলের কোনো অভিযোগ নেই।এভাবেই
কাটছিল ছুটির দিন গুলো।এক সময়
ছুটির সময় শেষ হয়ে
গেলো।পরশু থেকে অফিস জয়েন
করতে হবে তাই কাল
সকালেই আমাকে শহরের জন্য রওনা হতে
হবে।আজই আমার ছুটির শেষ
দিন।রাতে খুব ভালোই খাওয়া
দাওয়া হলো।খুব সকালে উঠতে হবে,তাই
সবাই তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।রাতুল
অবশ্য মোবাইল টিপছিল।ওর একটু দেরী করে
ঘুমাবার অভ্যাস।তাও বড় ভাই হিসেবে
একটি ধমক দিয়ে ঘুমিয়ে
পড়লাম আমি।
.....
হঠাত মাঝরাতে কে যেন আমাদের
দরজার বাইরে থেকে ডাক দিল,,,
রাতুল......
এক লাফে ঘুম থেকে
উঠে পরলাম।স্বপ্ন দেখলাম নাকি??কিন্তু না,,পরক্ষনেই আবার
ডাক এলো বাইরে থেকে,,
রাতুল......
এবার রাতুলের ঘুম ভেঙে গেলো।সে
বিছানায় উঠে বসল।ভালোভাবে মনে
করার চেষ্টা করে দেখলাম আজ
অমাবস্যার রাত।তার মানে কি!!!
এটা নিশিডাক??আজ তাহলে রাতুল!!!
নাহ আর ভাবতে পারছিনা।রাতুল
কে আটকাতে যাবো তার আগেই
আরো একবার ডাক এলো,,,
রাতুল.....!
আমি রাতুল কে মানা করার
আগেই রাতুল সেই ডাকে সাড়া
দিল,,
-কে???
দেখতে দেখতে মুহুর্তের মধ্যে আমার কোলে ঢলে
পড়ল আমার ভাইয়ের নিথর
দেহটি।বুঝলাম আমার ভাই আর
নেই।বিগ্বিদিক শূন্য হয়ে পরলাম।কি করব
বুঝতে না পেরে দৌড়
দিলাম দরজার দিকে।
দরজা খুলে যা দেখলাম
তাতে আমার ঘাম ছুটে
গেলো!!!
তাহলে কি গ্রামবাসীদের কথাই
সত্যি??
hutta
ReplyDelete